Monday, February 29, 2016

আর কত পঙ্গু হলে রাঙ্গুনিয়া রাজানগর-ইসলামপুর ঘাগড়া খালে নির্মিত হবে সেতু !

জগলুল হুদা::  রাঙ্গুনিয়া : আর কত পঙ্গু হলে রাঙ্গুনিয়া রাজানগর-ইসলামপুর ঘাগড়া খালের উপর নির্মাণ করা হবে সামান্য ৫০ ফুট দৈর্ঘ্যরে একটি সেতু? এই প্রশ্ন রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ইলামপুর ইউনিয়নের আল আমিন পাড়া গ্রাম বাসীর। এই খালের উপর একটি সেতুর অভাবে অত্র এলাকার জনসাধারণের ভোগান্তির শেষ নেই। ভোগান্তি এতটাই বেশি যে, মৃত ব্যক্তির লাশ নিয়ে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়, কখন জোয়ারের পানি কমবে আর খাল পার হয়ে লাশ দাপন করা হবে ! শুধু তাই নই এই একটি সেতুর অভাবে উপজেলার কৃষি অঞ্চল নামে পরিচিত এই এলাকার কৃষকদের তাদের উৎপাদিত পণ্য যথাসময়ে রানীরহাটে নিতে না পারায় ন্যার্য মূল্য পায় না। এছাড়াও নদীর উপর ভ্রাম্যমান বাসের সাঁকো পার হয়ে প্রতিদিন অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে পারাপার করছে খালের দুই প্রান্তের প্রায় ৩ হাজার জনসমষ্টির স্কুল-কলেজ পড়–য়া শিক্ষার্থী। কারণ খালের এক পারে প্রাথমিক বিদ্যালয় অন্য পারে উচ্চ বিদ্যালয়, কলেজ, মাদ্রাসা সহ নানা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তাই কোমল মতি শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে দুর্ভোগ চরমে। বর্ষা মৌসুম ও খালে পানি আসলে বিদ্যালয়ে উপস্থিতি সংখ্যা হাতে গুনা কয়েক জনে নেমে আসে বলে জানায় আল আমিন পাড়া সরকারী প্রাথামিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। স্কুলে আসা-যাওয়ার সময় সাঁকোর পাশে পাহারা করে বসতে দেখা যায় কোন কোন অভিভাবককে। শত বর্ষ পুরাতন এই জন পদে খালের উপর সেতু নির্মাণে শিক্ষার্থীদের মানব বন্ধন সহ নানা মহলে ধরনা দিয়ে কোন কাজ না হওয়ায় ক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী।
সরেজমিন পরিদর্শনে জানা যায়, শত বছরের পুরাতন রাঙ্গুনিয়া ইসলামপুর আল-আমিন পাড়া, ঘাগড়া কুল, লেঙ্গার পাড়া বিস্তৃর্ণ কৃষি জনপদ নামে খ্যাত। কৃষকদের কথা বিবেচনা করে এলাকার বুক চিরে আশির দশকে খাল খনন করা হয়। খাল খননের কয়েক বছর ভালই ছিল এই জনপদের জীবন যাত্রার মান। কালের পরিক্রমায় খালের দু'পার ভেঙ্গে বড় হয় খালের আয়তন। খালের দু'পাশে জীবন-জীবিকার তাগিদে নানা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সরকারী বেসরকারী অনেক অফিস আদালত গড়ে উঠলেও শুধু নির্মিত হয়নি একটি সেতু। বাঁশের সাঁকো দিয়ে ঘাগড়া খাল পার হতে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার স্বীকার হচ্ছেন কেউ না কেউ। স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের উৎকন্ঠা তাই কাটছেই না।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা এই প্রতিবেদককে জানান, খালে পানি আসলে তারা ঠিক মত স্কুলে যাতায়াত করতে পারে না। অনেক সময় তাদের বই খাতা নিয়ে খালের পানিতে পড়ে গিয়ে নানা দুর্ভোগের স্বীকার হতে হয়। সন্তানকে স্কুলে পাঠিয়ে উৎকন্ঠায় বসে তাকতে হয় অভিভাবককে। তাই তাদের দাবী অচিরেই খালের উপর একটি সেতু নির্মানের।
এধিকে এই ইউনিয়নের কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য সময় মত রানিরহাট বাজারে আনতে না পারায় তারা ন্যার্য মূল্য পাচ্ছেন না। মৃত ব্যাক্তি দাফনে অপেক্ষা করতে হয় খালের পানি কমার জন্য। বর্তমান শিক্ষা, কৃষি বান্ধব এই সরকার শিক্ষার্থী ও কৃষকদের প্রতি এত অনীহা দেখে ক্ষুদ্ধ এই প্রবীনেরা। খালের উপর দ্রুত সেতু নির্মানের দাবী জানিয়ে বলেন, সরকার আসে সরকার যায়, নানা সময় নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে কোন কাজ হয় না। মাঝে মাঝে মনে হয় যেন আমরা অন্য কোন দেশে বসবাস করছি। আমরা এই দেশের নাগরিক না।
রাঙ্গুনিয়া কাঠ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি কামাল উদ্দিন চৌধুরী এই প্রতিবেদককে জানান, নির্বাচনের আগে সবাই নির্বাচনের একটি ওয়াদা করেন এলাকাবাসীর সাথে খালের উপর সেতু নির্মাণের। কিন্তু ভোটের পর তাদের আর দেখা মেলে না। তাদের দেয়া ওয়াদা ভোট শেষ হওয়ার সাথে শেষ হয়ে যায়।
রাজানগর-ইসলামপুর ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ সড়কের উপর সেতু নির্মানের দাবী দীর্ঘ দিনের। এই সেতুটি বহু সময় টেন্ডার প্রক্রিয়ায় থাকার পরও কাজ না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ১ নং রাজানগর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন মোস্তাফা জাহাঙ্গির। তিনি আরো বলেন, সেতুটি রাজানাগর ও ইসলামপুর ইউনিয়নের সাথে যোগাযোগের অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি মাধ্যম। ২ ইউনিয়নের মাঝে সীমানা সংযোগ হওয়ায় অদৃশ্য কারণে ঝুলে আছে সেতু নির্মাণের কাজ।
অচিরেই খালের উপর সেতু নির্মান করে প্রাচীনতম এই জনপদের মানুষের দুঃখ-দুর্দশা লাগবে উদ্যোগ নেবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এমনটায় দাবী এলাকাবাসীর।

No comments:

Post a Comment