Sunday, September 4, 2016

এতো অপমান কেন?

 সিরাজী এম আর মোস্তাকঃ ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে কারা যুদ্ধাপরাধ করেছে? কারা ত্রিশ লাখ শহীদের প্রাণ কেড়েছে ও দুই লাখ নারীর ইজ্জত নিয়েছে? ২৬ শে মার্চ কালো রাতের সূচনাকারী কারা? পাকিস্তানের ঘাতক সেনাবাহিনী নাকি বাংলাদেশের অসহায় জনগণ? এ বিষয়ে পৃথিবীর সর্বোচ্চ আদালত তথা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের রায় কি? সম্প্রতি শুধুমাত্র বাংলাদেশী যুদ্ধাপরাধীদের সাজা হয়েছে। পাকিস্তানীরা ধোয়া তুলসি পাাতা। এ সংবাদ বিশ্ব বিবেককে নাড়া দিয়েছে। সবাই জেনেছে, বাংলাদেশীরাই যুদ্ধাপরাধী; পাকিস্তানিরা নয়। বাংলাদেশের ষোল কোটি জনতা যুদ্ধাপরাধী প্রজন্ম আর পাকিস্তানীরা বীরের জাতি। এতে বাংলাদেশের সম্মান বেড়েছে নাকি কমেছে?
বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে ব্যাপক বাড়াবাড়ি শুরু হয়েছে। এ সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন করাও আপত্তি ধরা হয়েছে। বাঙ্গালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্ত নয় কেন, এ প্রশ্নও করা যাবেনা। মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এম এ জি ওসমানীর নাম মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নেই কেন, তাও বলা নিষেধ। ত্রিশ লাখ শহীদ ও দুই লাখ সম্ভ্রমহারা মা-বোন মুক্তিযোদ্ধা নাকি রাজাকার, এসব প্রশ্ন অপরাধতুল্য। অর্থাৎ বর্তমানে যে দুই লাখ মুক্তিযোদ্ধা তালিকা ও কোটা চালু আছে, তাই যথেষ্ট। এ ছাড়া অন্য কাউকে মুক্তিযোদ্ধা বলা যাবেনা, এমনকি দেশনেত্রীকেও নয়। মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে দেশে বৈষম্যের পাহাড় সৃষ্টি হলেও তা নিয়ে মন্তব্য করা অন্যায়। এভাবে ইতিহাসের গতিধারা থেমে দেয়া কি ভালো লক্ষণ? তাতে বাংলাদেশের মান বাড়ছে নাকি কমছে?
ইতিহাসের অপমান থেকে বর্তমান অপমান আরো নিকৃষ্ট। বর্তমানে জঙ্গি বিরোধী প্রচারণা শুরু হয়েছে। ১৯৭১ সালেও পাকিস্তান সেনাবাহিনী এদেশের গেরিলা যোদ্ধাদেরকে জঙ্গি হিসেবে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। দীর্ঘ নয়মাস রক্ত-নদী প্রবাহিত করেছে। তারপর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। স্বাধীন দেশে জঙ্গিবাদের উৎপত্তি কেন? যাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নেই, তারা জঙ্গি হতে পারে। স্বাধীনতার চার দশক পরে বাংলাদেশ জঙ্গি কেন? আমরা কি পরাধীন হয়েছি? এ অপমান কি কখনো ঘুচবে?
এক বিদেশি বন্ধু আমাকে বললো, বন্ধু! তোমরাই যুদ্ধাপরাধী প্রজন্ম, পাকিস্তানীরা নয়। তোমরা মুক্তিযোদ্ধা বা বীরের জাতি নও, পাকিস্তানীরা বীরের জাতি। আমি বললাম, কিভাবে? সে বললো, পৃথিবীর সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে তোমরাই যুদ্ধাপরাধী; পাকিস্তানীরা নয়। অর্থাৎ তোমরাই ত্রিশ লাখ ব্যক্তিকে হত্যা করেছ ও দুই লাখ নারীকে ধর্ষণ করেছ; পাকিস্তানীরা নয়। এমনকি আন্তর্জাতিক আদালতে প্রমাণ হয়েছে, মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সাঈদী একাই বহু নারী ধর্ষণ করেছে। আমি কোনো উত্তর দিতে পারিনি। পৃথিবীর কাছে আমি যুদ্ধাপরাধী প্রজন্ম। এ অপমান আমার বুকের পিঞ্জরে লেগেছে।
যারা আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে পাকিস্তানীদের পরিবর্তে বাংলাদেশীদেরকে যুদ্ধাপরাধী সাব্যস্ত করেছে, তারা জঘন্য রাষ্ট্রদ্রোহী। তারা বিশ্বাসঘাতক মীর জাফরদের প্রেতাত্মা। তাদেরকে চিহ্নিত করে চিরতরে নির্মূল করা উচিত। তারাই জঙ্গি। তারা বাংলাদেশের মান নষ্টের ঘৃণ্য চক্রান্তে লিপ্ত। তারা যুদ্ধাপরাধ ও জঙ্গিবাদ ছাড়া আরো কতো অপমান যে আমদানি করবে, তার শেষ নেই।
এখনই উচিত, বাংলাদেশের বিশ্বাসঘাতক স্বার্থান্বেষী মহলকে চিহ্নিত করা। মুক্তিযুদ্ধের নামে প্রদত্ত সকল সুবিধা বাতিল করা। শুধু দুই লাখ মুক্তিযোদ্ধা তালিকা বা কোটা নয়; বঙ্গবন্ধু, জাতীয় চার নেতা, জেনারেল ওসমানীসহ ১৯৭১ এর সাড়ে সাত কোটি যোদ্ধা ও শহীদ সবাইকে মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি দেয়া। বাংলাদেশের ষোল কোটি নাগরিককে তাদের প্রজন্ম ঘোষণা করা। এতে বাংলাদেশ যুদ্ধাপরাধী ও জঙ্গি অপমান থেকে সামান্য হলেও রেহাই পাবে।

No comments:

Post a Comment