Wednesday, December 16, 2015

চট্টগ্রাম কলেজে ছাত্রলীগের ওপর শিবিরের হামলা


অগ্রদৃষ্টি ডেস্কঃ -বিজয় দিবসে চট্টগ্রাম কলেজে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে আসার পর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা। হাতবোমা ফাটিয়ে, দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে এ হামলা চালালে কলেজে শিক্ষকদের আয়োজিত বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানও পণ্ড হয়ে যায়। পরে দুই পক্ষ দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়ালে ফাঁকা গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনার জের ধরে শিবির নিয়ন্ত্রিত পাশের হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজে অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষের কক্ষসহ আট-দশটি কক্ষে ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়েছে। পরে কলেজের দুটি ছাত্রাবাস অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। সংঘর্ষের ঘটনায় চট্টগ্রাম কলেজ কর্তৃপক্ষ জরুরি বৈঠকে বসে চারটি ছাত্রাবাস অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে ছাত্রদের গতকাল বুধবার রাত ৮টার মধ্যে এবং ছাত্রীদের আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার মধ্যে ছাত্রাবাস ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঘটনার পর থেকে পরিস্থিতি থমথমে। কলেজ এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে প্রায় দুই ঘণ্টা দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। বন্ধ হয়ে যায় ওই এলাকায় যান চলাচল। এ সময় দোকানপাট বন্ধ করে দিয়ে ভয়ে ব্যবসায়ীরা এলাকা ত্যাগ করে। নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) দেবদাস ভট্টাচার্য গতকাল সন্ধ্যায় কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কলেজ শহীদ মিনারে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ফুল দেয়। এরপর তারা সেখানে বিজয় দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা করছিল। এ সময় অতর্কিতে শিবির ক্যাডাররা ছাত্রলীগের আলোচনা অনুষ্ঠানে হামলা চালায়। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের লক্ষ্য করে শিবিরকর্মীরা গুলি ছোড়ে। খবর পেয়ে দ্রুত আমরা সেখানে যাই।’ তিনি আরো বলেন, ‘হোস্টেল ও কলেজে তল্লাশি চলছে। এ পর্যন্ত (সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা) অর্ধশতাধিক ছাত্রকে আটক করা হয়েছে। তাদের মধ্য থেকে হামলার ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। ছাত্র হোস্টেল থেকে বেশ কিছু দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।’ নগরীর চকবাজার থানার ওসি আজিজ উদ্দিন জানান, দুপুর ১২টার দিকে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের কর্মীরা শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ক্যাম্পাসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করার সময় শিবিরকর্মীরা হামলা চালায়। কলেজের একাডেমিক ভবনে তখন কর্তৃপক্ষের আয়োজনে বিজয় দিবসের আলোচনা সভা চলছিল। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, দুপুরে ছাত্রলীগ নেতাদের আলোচনা অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে শিবিরকর্মীরা দুটি হাতবোমা ফাটায়। এ সময় হুড়োহুড়ি শুরু হয়। পরে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এ সময় উভয় পক্ষই বৃষ্টির মতো ঢিল ছুড়তে থাকে। শিবির হামলা চালিয়ে কলেজ ক্যাম্পাস ত্যাগ করে। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও ঘটনার প্রতিবাদে কলেজের সামনের সড়কে অবস্থান নেয়। তারা পুলিশের সঙ্গে বাগিবতণ্ডায় জড়ায়। দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে প্রায় দুই ঘণ্টা কলেজ সড়ক অবরোধ করে ছাত্রলীগ। এ সময় তাদের হাতে ধারালো অস্ত্র দেখা গেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা আরো জানায়, একপর্যায়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা শিবিরকে প্রতিরোধ করার প্রস্তুতি নিলে আবার ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়। শিবিরের নেতাকর্মীরা সংঘবদ্ধ হয়ে ছাত্রলীগকে কলেজের বাইরে বের করে দিয়ে মূল গেটে তালা লাগিয়ে দেয়। এ সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সরকারি মহসিন কলেজের গেটের সামনে অবস্থান নিলে ওই কলেজের ভেতর থেকেও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। খবর পেয়ে নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নূরুল আজিম রনির নেতৃত্বে শতাধিক ছাত্রলীগ নেতাকর্মী মিছিল করে সেখানে যায়। তারা সেখানে গেলে শিবিরের নেতাকর্মীরা চট্টগ্রাম কলেজ ও মহসিন কলেজ থেকে তাদের লক্ষ্য করে রাস্তায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। কলেজের দিকে লক্ষ্য করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও পাল্টা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগ নেতা মাহমুদুল করিম জানান, শিবির তাঁদের পাঁচ কর্মীকে কলেজের ভেতরে আটকে রেখেছিল। ছাত্রলীগ গেট ভেঙে তাদের মুক্ত করার চেষ্টা করে। হামলায় শাওন নামে তাঁদের এক কর্মী শিবিরের ইটপাটকেলের আঘাতে গুরুতর আহত হন। গতকাল দুপুর দেড়টায় ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, পুলিশ কলেজের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নিলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা দেবপাহাড় মোড়ের বিপরীতে ক্যান্টিন গেটের তালা ভেঙে কলেজ ক্যাম্পাসে ঢুকে যায়। তারা কলেজ ক্যান্টিন, অডিটরিয়াম ও লাইব্রেরি ভবন এবং মূল ভবনে অধ্যক্ষের অফিসের পাশের কক্ষের সামনের আয়নায় ইটপাটকেল ছোড়ে। এ সময় শিবিরের কর্মী সন্দেহে একজনকে ধরে পিটুনি দেয় ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা শিবিরকে সহযোগিতার অভিযোগ এনে কলেজের নৈশ প্রহরী মো. মফিজউদ্দিনের ঘরও ভাঙচুর করে। পরে পুলিশ গিয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সেখান থেকে সরিয়ে দিলে তারা পুলিশের সঙ্গে মূল ফটক দিয়ে কলেজে প্রবেশ করে। চট্টগ্রাম কলেজের অধ্যক্ষ জেসমিন আক্তার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিজয় দিবস উপলক্ষে কলেজ অডিটরিয়ামে আলোচনা সভার পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলছিল। এতে কলেজের অনেক ছাত্রছাত্রী ছিল। একপর্যায়ে শুনতে পেলাম বাইরে সংঘর্ষ, গোলাগুলি হচ্ছে। এ সময় অনুষ্ঠান আর করতে পারিনি। আমরা ভেতরে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ি।’ তিনি বলেন, ‘তখন কাউকে বের হতে দিইনি। ২০ মিনিট পর পুলিশ আমাদের বের করে নিয়ে আসে।’ চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নূরুল আজিম রনি বলেন, ‘ছাত্রাবাসগুলোতে কোনো বৈধ ছাত্র থাকে না। পার্শ্ববর্তী শিবির নিয়ন্ত্রিত মহসিন কলেজে মেয়েদের হোস্টেলে ছেলেরা থাকে। হোস্টেলগুলো একেকটা অবৈধ অস্ত্র আর সন্ত্রাসী-জঙ্গিদের মজুদখানায় পরিণত হয়েছে। আমরা সেগুলো বন্ধের দাবি জানাচ্ছি।’ হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজে ভাঙচুর : ইসলামী ছাত্রশিবির নিয়ন্ত্রিত চট্টগ্রামে হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজের অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষের কক্ষসহ আট-দশটি কক্ষে ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়েছে। গতকাল বিকেলে এ ঘটনা ঘটে। সন্ধ্যায় জরুরি বৈঠক করে কলেজের দুটি ছাত্রাবাস অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে কলেজের উপাধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলমগীর চৌধুরী গত রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিকেল সাড়ে ৩টায় আমরা বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান শেষে কলেজ থেকে বের হই। এরপর পৌনে ৫টার পর কে বা কারা এসে আমাদের আট-দশটি কক্ষ ভাঙচুর করে। আমরা চকবাজার থানাকে অবহিত করেছি। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে কলেজের দুটি ছাত্রাবাস (মহসিন মুসলিম এবং নতুন ছাত্রাবাস) অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছি। রাত ১০টার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দিয়েছি। এ ছাড়া কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আলাউদ্দিন আল আজাদকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছি।’ চট্টগ্রাম কলেজের বিপরীত পাশে সরকারি এ কলেজটি অবস্থিত। গতকাল দুপুরে ওই কলেজে ছাত্রলীগের ওপর শিবিরের হামলার পর বিকেলে মহসিন কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর অঞ্জন কুমার নন্দী, উপাধ্যক্ষ প্রফেসর মোহাম্মদ আলমগীর চৌধুরী, অফিস সহকারী (ক্যাশ) সামিনা আকতারের কক্ষ, বিজ্ঞান ভবনের ল্যাব, গণিত, জীববিজ্ঞান, কলা ভবনের নিচতলার দরজা ও জানালার কাচ ভাঙচুর করা হয়। 

No comments:

Post a Comment