Thursday, December 17, 2015

ফুতপাতের লাল চাদর দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা, জাতি কি তবে আজো নির্লজ্জ?


নাজিম হাসান,স্টাফ রিপোর্টার,রাজশাহী: দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান যারা জীবন বাজি রেখে ছিনিয়ে এনেছেন লাল সবুজের পতাকা। সেই সূর্য সন্তানদের তানোরে বিজয় দিবসে ফুতপাতের লাল ছোট্ট চাদর দিয়ে দেয়া হয়েছে সংবর্ধনা। স্বাধীনতার ৪৪ বছরের এমন তাচ্ছিল্য সংবর্ধন দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের অবমাননা করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুনীরুজ্জামান ভূঁঞা। উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে গত বুধবার ডাকবাংলো ফুটবল মাঠে খেলাধুলা শেষে মুক্তিযোদ্ধাদের লাল চাদর ও রজনীগন্ধার ফুল দিয়ে সংবর্ধনা দেন ইউএনও। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের বক্তব্যে ইউএনও বলেন, সরকারের বরাদ্দ ন্যুনতম। তার মধ্য থেকে আপনাদের হাতে সামান্য অপ্রতুল কিছু তুলে দিতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে হচ্ছে। এ অনুষ্ঠান ও দুপুরের খাবারের জন্যে ইউএনও উপজেলার এনজিও প্রতি ১ হাজার থেকে ১৫’শত টাকা চাঁদা দাবি করে। উপজেলা সদরে জাগরণী চক্র নামের ও আশা নামের এনজিও দুটি ৫০০ টাকা করে দিতে চাইলে প্রচন্ড থ্রেড করেন ইউএনও। চাতাল সমিতি, বিসিআইসি সমিতি, করাত কল সমিতি, ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, স্কুল কলেজ, পেট্রোল পাম্প সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে অন্তত ২ লক্ষ ৫০ হাজার থেকে ৩ লক্ষ টাকা চাঁদা উত্তোলন করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের লাল চাদর যাতে কেউ বুঝতে না পারে সে জন্যে উপহার মোড়ানো ওয়াল পেপার ও সাদা পলেথিনে আকর্ষণীয় ভাবে সবাইকে বোকা বানিয়ে নিজেকে চতুর মনে করে এভাবে চাদর গুলো তুলে দেন তাদের হাতে। শুধু এখানেই শেষ না দুপুরে মুক্তিযোদ্ধাদের আয়োজনে খাবারে ছিল ব্যাপক স্বল্পতা। অনেকে খাবার না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতে করতে চলে যান। এমনকি পরে উপজেলা পরিষদের কর্মকর্তা কর্মচারী ও দায়িত্ব থাকা শিক্ষকদের খাবারে ব্যাপক হ-য-ব-র-ল সৃষ্টি হয়। অনেকে খাবারের প্লেট রেখে চলে যান। খাবার খেয়ে বের হয়ে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মজিদ ওয়াল পেপার থেকে লাল চাদর বের করে আক্ষেপ করে জানান, স্বাধীনতার ৪৪ বছরের পুরষ্কার ফুতপাতে পড়ে থাকা লাল চাদর। এটাই আমাদের ভাগ্যে লিখা ছিল। মুক্তিযোদ্ধা মোজাহার আলী দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, লোক মুখে শুনেছি সব স্তর থেকে ইউএনও’র পিয়ন দিয়ে চাঁদা আদায় করা হয়েছে। কেন আমাদেরকে এত তাচ্ছিল্য করা হলো। আমরা মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে ইউএনও’র এমন কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি দেয়া উচিত বলে জানান তিনি। মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক জানান, বছরে একবার এ বিজয়ের দিনে ডাক পড়ে আমাদের। আমরা খেতে চাইনি। কিছু নিতেও চাই না। সরকার যথেষ্ট দিচ্ছে। এ ইউএনও আশার পর গত বিজয় দিবসে ত্রাণের কম্বল দিয়ে আমাদের সংবর্ধনা দিয়েছিল। আমাদের সন্দেহ হয় তিনি কি প্রকৃত পক্ষে মুক্তিযোদ্ধার চেতনায় বিশ্বাসী এমন প্রশ্ন রাখেন তিনি। উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুল ওহাব শেখ জানান, বিজয় অনুষ্ঠানে ৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা ছিল। তার মধ্যে ১২ জন নারী। ইউএনও’র এসব কর্মকান্ড দেখে কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। কি মন্তব্য করব এসব নিয়ে। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুনীরুজ্জামান ভূঁঞা চাঁদা উত্তোলনের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, বরাদ্দের পরিমাণ খুবই কম। এর মধ্যে থেকে জাতির সূর্য সন্তানদের কিছু দিতে পেরেছি এটাই বা কম কিসের।

No comments:

Post a Comment